Sunday, February 25, 2018

আপনি স্বপ্ন দেখেন কেন? জেনে নিন স্বপ্ন দেখার কারন

স্বপ্ন দেখার কারন জানার আগ্রহ মানুষের অনেক প্রাচীনকাল থেকেই। স্বপ্নে মানুষ কত কি দেখে? অনেক স্বপ্ন দেখে মানুষের বীর্যপাত হয়ে প্যান্ট পর্যন্ত ভিজে যায়। কিন্তু কেন? কেন মানুষ এরকম স্বপ্ন দেখে? কখনো ভয়ের কিংবা কখনো ভালবাসার প্রেমিকের গোপন ভালবাসা। কি আছে এই স্বপ্নের ভেতর? স্বপ্ন কি সত্য করা যায়?

আপনি স্বপ্ন দেখেন কেন? জেনে নিন স্বপ্ন দেখার কারন

কতভাবেই না স্বপ্ন দেখে মানুষ! জেগে দেখে ঘুমিয়ে দেখে। কতকিছুই না দেখে সেই স্বপ্নে। সাদা-কালো স্বপ্ন, রঙিন স্বপ্ন। ভয়ের স্বপ্ন, সাহসের স্বপ্ন, প্রেম-ভালোবাসা এবং আদরের স্বপ্ন। মাথামুণ্ডু নেই এমন স্বপ্নও দেখে। আমরা ঘুমের মধ্যে অনেক সময় অনেক কিছুই স্বপ্নে দেখি, তবে এসব স্বপ্নের অর্থ আমরা জানি না, বুঝতেও পারি না। কিন্তু কেন দেখে স্বপ্ন? এই এক প্রশ্ন নিয়ে বিজ্ঞানীদের ঘুম নেই। তারা স্বপ্ন দেখা বাদ দিয়ে লেগে আছেন এর কারণ খুঁজতে। শত শত বছর ধরে খোঁজা হচ্ছে কারণ। কারণ পরিষ্কারভাবে জানা যাক আর না যাক, স্বপ্ন দেখার কিছু থিওরি’ আবিষ্কার করে ফেলেছেন তারা। কোনো কোনো গবেষকের মতে স্বপ্ন হচ্ছে মানুষের অবদমিত মনের প্রতিফলন, আবার কারো মতে স্বপ্ন অর্থহীন।

এ প্রসঙ্গে সাহিত্যিক ও মনোবিজ্ঞানী মোহিত কামাল বলেন, মানুষের ঘুমের দুইটি পর্যায় রয়েছে। একটি র‌্যাপিড আই মুভমেন্ট – আরআইএম, অন্যটি নন র‌্যাপিড আই মুভমেন্ট – নন আরআইএম। নন আরআইএম-এ থাকার সময় মানুষ স্বপ্ন দেখে না। সেই সময় সেরোটারিন হরমোন বেশি নিঃসরিত হয়। আরআইএম- পর্যায়ে থাকার সময় স্বপ্ন দেখে। এই সময় নন অ্যাড্রোনালিন ও অ্যাড্রোনালিন হরমোন বেশি নিঃসরিত হয়। মানুষ যখন উদ্বিগ্ন থাকে তখন সে স্বপ্ন বেশি দেখে। দৈনন্দিন জীবনে ঘটনার তথ্য মানুষের মস্তিষ্কের ‘থ্যালামাস’ নামক অংশে জমা হয়। যখন মানুষ ঘুমায়, তখন এই থ্যালামাস বন্ধ বা ঘুমন্ত অবস্থায় থাকে। স্বপ্ন যখন দেখি তখন এই থ্যালামাস বন্ধ থাকে আর আরআইএম পর্যায়ে থাকার সময় থ্যালামাস দোলনার মত দুলতে থাকে। ফলে ছিন্ন ছিন্ন ঘটনাপ্রবাহ আমরা স্বপ্নে দেখি।
মোহিত কামাল বলেন, আমরা স্বপ্নে অনেক সময় দৌড়তে চাই, চিৎকার করতে চাই- কিন্তু পারি না। এটাকে অনেকে বোবায় ধরা বলে মনে করে। আসলে ঘুমের সময় আমাদের মস্তিষ্কের মোটর সিগন্যাল বন্ধ থাকে। মোটর মুভমেন্ট বন্ধ থাকায় সেই কাজ করতে পারি না।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিত্সা মনোবিজ্ঞানী রুবিন নাইমান মস্তিষ্ককে পরিপাকতন্ত্রের সঙ্গে তুলনা করছেন। তিনি বলছেন, ‘রাতের বেলায় মস্তিষ্ক প্রতীকী অর্থে (সারা দিনের সবকিছু) গিলে খায়, হজম করে এবং তা থেকে নির্যাসটুকু নিংড়ে নিয়ে বাকিটুকু বের করে দেয়। আর মস্তিষ্ক যা রেখে দেয় আমাদের স্মৃতিতে, চিন্তায়, তাই থাকে এবং স্বপ্নকে এ প্রক্রিয়ার পরিপাক পদ্ধতি বলা যেতে পারে।’
স্বপ্ন যাই হোক না কেন, লোকসংস্কৃতিতে রয়েছে স্বপ্ন অনুযায়ী স্বপ্নের মানে। সুদূর অতীত থেকেই মানুষ স্বপ্নের এসব অর্থ বিশ্বাস করে আসছে। অনেকের স্বপ্ন নিয়ে নানা অন্ধবিশ্বাস রয়েছে। মৃত ব্যক্তিকে স্বপ্নে দেখলে এখনো ফকির খাওয়ানোর রেওয়াজ রয়েছে। তাছাড়া মৃত ব্যক্তিকে স্বপ্নে দেখলে যে দেখে তার আয়ু বেড়ে যায়, এমন ধারণাও প্রচলিত রয়েছে। এমন কথাও শোনা যায়, মৃত ব্যক্তি এসে স্বপ্নে ডাকলে সেই মানুষের মৃত্যু হয়। স্বপ্নের মানে নিয়ে বইও কম প্রকাশিত হয়নি। কিন্তু বিজ্ঞানীদের মতে, এসবের কোনো ভিত্তি নেই।
শুধু ঘুমের মধ্যে দেখা স্বপ্নই তো স্বপ্ন নয়, দিবাস্বপ্নটাও স্বপ্নই। অলস ব্যক্তিদের ‘দিবাস্বপ্ন’ দেখা নিয়ে উপহাস করা হলেও রাজনীতিক, বড় ব্যবসায়ী, লেখক-সাহিত্যিকরা তো দিবাস্বপ্নই দেখেন। এদিকে স্বপ্ন নিয়ে বড় উক্তি করেছেন ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবুল কালাম। তিনি বলেছেন, ‘মানুষ ঘুমিয়ে যা দেখে তা স্বপ্ন নয়। স্বপ্ন সেটাই- যা মানুষকে ঘুমাতে দেয় না।’

স্বপ্ন কি?



তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, স্বপ্ন হচ্ছে মানুষের এমন এক মানসিক অবস্থা যাতে ঘুমের মধ্যে অবচেতনভাবে অনুভব করা কিছু ঘটনা। যেসব ঘটনা কাল্পনিক হলেও স্বপ্ন দেখার সময় সত্যি বলে মনে হয়। পুরানো অভিজ্ঞতার টুকরো টুকরো স্মৃতি সম্ভব অসম্ভব সব ঘটনার রূপ নেয়। স্বপ্ন দেখার সময় ঘুমের মধ্যেই মানুষের চোখ দ্রুত নড়াচড়া করে কিন্তু পুরো শরীর তখন শিথিল হয়ে থাকে। একে ইংরেজিতে বলে ‘র‌্যাপিড আই মুভমেন্ট- আরইএম’। যদিও এ নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। অন্যদিকে সিগমুন্ড ফ্রয়েড বলেন, স্বপ্ন মূলত মানুষের গোপন আকাঙ্ক্ষা এবং আবেগের প্রকাশ।